সব শিশুই স্রষ্টার দেওয়া প্রাকৃতিক বিধানে রুহু জগত থেকে মায়ের গর্ভে- পরে দুনিয়ায় আসে বড় হয় জ্ঞানেগুণে শিক্ষায় একটা সীমিত ও অনিশ্চিত সময়ের অবসানে গমন করে কবরে- পুনরুত্থানের পর ঈমান ও ইবাদতের হিসেবের পর হয় জান্নাতে না হয় জাহান্নামে যাবে মানুষ।
কোন শিশুই একক কোন ভাষা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনা। জন্মগতভাবে সব শিশুর ভাষা’ই ওঁয়া ওঁয়া। এমনকি সব শিশুর মাও ওঁয়া ওঁয়া ভাষা নিয়েই দুনিয়া এসেছিল। পরিবেশ তাকে ব্যবহারগত দিক দিয়ে বিভিন্ন ভাষায় অভ্যস্ত করে তুলে। এমনিভাবে সব শিশুই আসে স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে বা পরিচয়ে।
মুখের ভাষা, গায়ের রঙ, লিঙ্গ, পেশা গোত্র ইত্যাদি বস্তুগত বিষয় যা কোন শিশুরই কোন মানুষেরই মূল আত্মপরিচয় বহন করেনা, আত্মসত্তার ভিত্তি হতে পারেনা, জাত জাতীয়তা অস্তিত্বের পরিচয় হতে পারেনা এইবস্তুগত বিষয়টা কেবলই বাহ্যিক আবরণ মাত্র।
শিশুর প্রাথমিক পরিচয় সে মানুষ, তার উর্ধ্বে ঈমানের পবিত্র কলেমা কেন্দ্রিক আকিদা-চেতনা-আদর্শ গ্রহণে মুল পরিচয় হয় ঈমানদার। যারা ঈমানের পবিত্র কলেমা গ্রহণ করবেনা তারা ঈমানের বিপরীত চেতনা আদর্শের ভিত্তিতে মানুষ ও ঈমানদার নয়। সুতরাং শিশুর প্রাথমিক পরিচয় সে মানুষ এবং চুরান্ত গন্তব্য ঈমান তা চুরান্ত প্রকৃত বা মূল পরিচয় মুমিন।
তাই মানুষ ও মুমিন এই দুইয়ের পরিচয়ের বাইরে অমানুষ বেইমান। শিশুর মুখের ভাষা(ব্যবহারগত), প্রাকৃতিকভাবে মানুষের গায়ের রঙ- লিঙ্গ, গোত্র এবং পেশা, বসবাসের দিক দিয়ে রাষ্ট্র যা-ই থাকুক না কেন শিশুর আত্মিক তথা সত্তাগত অস্তিত্ব বা পরিচয় বস্তু ভিত্তিক নয় তথা বস্তুবাদী মতবাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় নয়।
যদিও এখন বিশ্বের প্রতিটি শিশুর আত্মসত্তা জাত জাতীয়তা দিবস কর্মসূচি ভাষা, পেশা লিঙ্গ বর্ন গোত্র বর্ডার ইত্যাদি বস্তু ভিত্তিক নির্ধারণ করা হয় যা জীবনের সত্য বিরোধী স্রষ্টা বিরোধী নাস্তিকতার মতবাদ।
স্রষ্টা ভিত্তিক স্রষ্টার রেসালাত কেন্দ্রিক আত্মসত্তা জাত জাতীয়তা অস্তিত্ব ও তদ্ভিত্তিক দিবস কর্মসূচি নির্ধারণও আছে। তবে দুনিয়ায় শুভ শক্তি এবং অশুভ অপশক্তির দ্বান্দ্বিক লড়াইয়ে স্রষ্টা ও স্রষ্টার রেসালাত বিরোধী, আত্মা-জীবন-মানবতা বিনাশী অপশক্তির মতবাদ বস্তুবাদই সব শিশুকে নাস্তিকতার উৎস বস্তুবাদি মতবাদে ধাবিত করে মানুষ হিসেবে না গড়ে তুলে জাতীয়তাবাদী করেছে।
তাই স্রষ্টার প্রাকৃতিক বিধানের দেওয়া ভাষার বৈচিত্রতা, গায়ের রঙ এর বৈচিত্রতা, লিঙ্গের বৈচিত্রতা, মানুষের প্রয়োজন অনুসারে পেশার বৈচিত্রতা, বসবাসের জন্য দেশ বা অঞ্চলের বৈচিত্রতা এসব কিছু ছিলো আছে থাকবে কিন্তু এগুলোর ভিত্তিতে বিভেদ বৈষম্য বিচ্ছিন্নতা শত্রুতা যুদ্ধ খুন জুলুম উৎখাত উচ্ছেদ হওয়া বা করা যায় না এবং যাবেওনা।
তবে করছে করেছে কারণ মানুষ হিসেবে আত্মসত্তা অস্তিত্ব জাত জাতীয়তা কিসের ভিত্তিতে হবে তার সুস্পষ্টভাবে জীবনের সত্য ভিত্তিক দিশা সংজ্ঞা নিকটবর্তী ইতিহাসে কয়েক শতাব্দীর মধ্যে ছিলো না, ছিলো শুধু উপরোক্ত বস্তুবাদী পরিচয়, বস্তবাদি চেতনার চর্চা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সকল মিথ্যার উৎস বস্তুবাদ বস্তুবাদী মতবাদ দুনিয়া ব্যাপী ব্যাপকভাবে সয়লাব হয়ে যায়। ফলে মানবজীবনের সংজ্ঞা, মানবসত্তা গঠনের ভিত্তি, রাষ্ট্র বিশ্ব ব্যবস্থা পালটাতে থাকে।
মানুষ হারালো সত্তাগত পরিচয়, জীবনের সত্য হয়ে গেলো বস্তু অথচ কোন বস্তুই জীবনের উর্ধ্বে জীবনের আসল সত্যও নয় বরং জীবনের সত্য স্রষ্টা ও স্রষ্টার রেসালাত । রাষ্ট্রের প্রকৃতিও একক গোষ্ঠী/একক জাতি/ একক ধর্মের ভিত্তিক নয় হবে সর্বজনীন প্রাকৃতিক মানবিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্র মানবতার বিশ্ব। কেননা রাষ্ট্র একটি সার্বজনীন জনকল্যাণ মুলক প্রতিষ্ঠান, কিন্তু রাষ্ট্রও এখন জবরদখল বস্তুবাদের বিষাক্ত জাতীয়তাবাদী অপরাজনীতির কাছে।
সব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টা ও স্রষ্টার রেসালাতের দেওয়া দুনিয়া ও দুনিয়ায় সকল সম্পদ কোন কিছুই আর মানুষের কল্যাণে মানবতার হাতে নেই বস্তুবাদী বিষাক্ত চেতনার অপরাজনীতির অপশক্তির হাতে চলে গেছে বা জিম্মি। ফলে বিশ্ব সম্পদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংকট দুর্ভিক্ষ। তাই বস্তু হয়েছে জীবনের মূল স্রষ্টা ও স্রষ্টার রেসালাত কেন্দ্রিক জীবন চেতনা হয়ে গেছে বিলুপ্ত।
মূখে মানুষ মুখেই ইসলাম মুসলিম আহলে সুন্নাত দাবি আছে কিন্তু চেতনাগত দিকে প্রায় সবাই এখন বস্তুবাদী একক ভাষাবাদি একক গোষ্ঠীবাদি একক বর্নবাদি একক দেশবাদি ফলে আত্মিক মৃত্যু ঘটেছে জন্মেছে শত্রুতা বেড়েছে খুন বৈধতা পেয়েছে নাস্তিকতা বিচ্ছিন্ন হয়েছে জীবনের সত্য। এভাবেই দেশ দুনিয়া এখন বস্তুবাদী মতবাদে আচ্ছন্নতায় নাস্তিকতায় পূর্ন। খুন জুলুম পাশবতা বর্বরতা মুলুকিয়তই হয়ে গেছে ধর্ম।
তাই ভাষা পেশা লিঙ্গ বর্ন এসবকে শিশুর মূল পরিচয় না ভেবে শিশুর স্রষ্টা ও স্রষ্টার আলো ভিত্তিক পরিচয়কেই বিশ্বাস করে সব মানুষের কল্যাণে মানবতার দুনিয়া গড়তে মানবিক চেতনা উপলব্ধি সম্পন্ন মানুষ তৈরির চেষ্টা করতে হবে বিশ্বাস রাখতে হবে।
একটা বিষয় খুবই খেয়াল জরুরি তা হলো এইযে, দেশাত্মতা, ভাষাগত পরিচয়, নাগরিকত্ব ও জাতীয়তা কখনোই এক বিষয় নয়। প্রথম ৩টি পরিবর্তনশীল কিন্তু জাতীয়তা অস্তিত্বের পরিচয় প্রকাশ করে যা অপরিবর্তনীয় চিরন্তন বিষয়। সব মানুষের মানবিক ভ্রাতৃত্ববোধে স্রষ্টার দয়া দান কল্যাণের অখন্ডতায় “মানব জাতীয়তা” অর্থাৎ মানবজাতি এবং ঈমানের পবিত্র একই কলেমা বিশ্বাসী সব মুমিনে ঈমানী জাতীয়তা “মুসলিম জাতীয়তা”। আর বাকি সব কিছু বস্তুবাদী মতবাদে সৃষ্ট নাস্তিকতার কৃত্রিম চেতনা বিষাক্ত আত্মা জীবন বিনাশী মানবতা বিধ্বংসী বস্তুবাদী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তা আর জাতীয়তাবাদ এক নয়- সম্পুর্ন বিপরীত। বস্তুবাদ নাস্তিকতা। জীবনের সত্য খেলাফতে ইনসানিয়াত যার ভিত্তি স্রষ্টা ভিত্তিক স্রষ্টার রেসালাত কেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা।
ছেলেমেয়ে, কালোধলো, বাঙ্গালী অবাঙ্গালী আরবি ইরাকি ইন্ডিয়ান চাইনিজ আমেরিকান বৃটিশ, ধনী গরীব, দেশি-বিদেশি ইত্যাদি বস্তুবাদী বিষাক্ত জাতীয়তাবাদী চেতনায় আচ্ছন্ন জীবন চেতনা কবুল করা যাবেনা। জীবন কেবল স্রষ্টারই দান মানবতা রাসুলের দান।সব মানুষ ভাই ভাই মানবতার রাজনীতির মাধ্যমে মানবতার রাষ্ট্র বিশ্ব চাই যেখানে ভিন্ন ভাষার কারণে-বর্নের পার্থক্যে-বসবাসের দিক দিয়ে অঞ্চল পার্থক্যের কারণে-গোষ্ঠীগত কারণে খুন জুলুম উৎখাত উচ্ছেদ মুলুকিয়ত নাই। থাকবে মানুষে মানুষে মানবিক ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রতি।
তাই বস্তুবাদী বিষাক্ত চেতনায় জাতীয়তাবাদী অপরাজনীতির সৃষ্ট শত্রুতাপরায়ন খুন জুলুম মুলুকিয়তের পারমাণবিক বিশ্ব নয় সব শিশুর সব মায়ের সব মানুষের কল্যাণে মানবিক বিশ্ব মানবতার বিশ্ব মানবতার রাজনীতি মানবতার রাষ্ট্র বিশ্ব চাই।
উল্লেখ্য, বস্তুর উর্ধে মানবসত্তা ও মানবতার রাজনীতির প্রবক্তা আল্লামা ইমাম হায়াত কর্তৃক উপস্থাপিত দিকনির্দেশনার আলোকে লিখিত।
-মাঈনউদ্দিন টিটু
মন্তব্য করুন