মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয়

মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয়

মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয়। ইসলাম সূর্য্য, চন্দ্র বা মাস বর্ষ ভিত্তিক নয়; সত্য ভিত্তিক তথা তাওহীদ রেসালাতের ভিত্তিতে ঈমানীয়াত ও খেলাফতে ইনসানিয়াত ভিত্তিক

বর্ষপরিক্রমা প্রাকৃতিক বিষয়, ঈমানী বিষয় নয়। পহেলা মহররম চন্দ্রবর্ষের আবর্তন, এভাবে সৌরবর্ষ ও ঋতুবর্ষ রয়েছে যার সবগুলোই প্রাকৃতিকভাবে মানব জীবনের কল্যাণের জন্য দয়াময় আল্লাহতাআলার ব্যবস্থা। বর্ষপরিক্রমা সরাসরি ধর্মীয় বিষয় নয় কিন্তু জীবনের অংশ হিসেবে ধর্মের কার্যধারায় যুক্ত, যেমন আমরা চন্দ্রমাসের হিসেবে ঈদে আজম-জাতীয় শহীদ দিবস-ঈদে মেরাজ শরীফ-রমজান-হজ্ব-কদর-বরাত ইত্যাদি পালন করি; তেমনি সূর্য্য পরিক্রমায় নামাজ সেহরী ইফতার ইত্যাদি পালন হয়, অর্থাৎ কোনোটাই ধর্ম ও জীবন থেকে আলাদা নয় আবার একক কোন ধর্মের নিজস্ব বিষয় নয়, আবার এসব উদযাপনের কোনো ঈমানী তাৎপর্য নেই বরং সমস্যা আছে।

কোন বিষয় ও ঘটনা ছাড়া কোন দিবস বা মাসের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য নেই। কোন দিবস বা মাসের আবহ ও তাৎপর্য্য নির্ধারিত হয় সে দিবস বা মাসের বিশেষ কোন বিষয় বা ঘটনার ভিত্তিতে। দয়াময় আল্লাহতাআলার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমনের মাধ্যমে আল্লাহতাআলাকে পাওয়া এবং ঈমান দ্বীন ও মুক্তির পথ লাভের কারণে মাহে রবিউল আওয়াল শোকরিয়া-আনন্দ-উৎসব ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যে উদযাপনের মাস হলেও বিশেষভাবে মহররম শোক ও শপথের মাস আনন্দ উদযাপনের নয়।

প্রকৃতি বা কোনো বর্ষ পরিক্রমার সাথে সত্য ও মানবতার মুক্তির সরাসরি সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে ঘটনাবলীর সাথে-ইতিহাসের সাথে-সত্য ও মিথ্যার ধারা পরিক্রমা উপলব্ধি করে নিজেদের অবস্থান ও কর্তব্য নির্ধারণের সাথে। দ্বীন-মিল্লাত-মানবতার বিরাজমান মহাসংকট ও মর্মান্তিক দুরবস্থায় সর্বোপরি প্রাণপ্রিয় কেবলাভূমির পরাধীনতার মধ্যে নববর্ষ উদ্যাপনের বিকৃতি মানসিকতা আপত্তিকর দুঃখজনক।

চন্দ্র নববর্ষ ইসলামের বিকৃতিকারী বাতিল মওদুদিবাদিরা নিজেদেরকে ইসলামিক কালচারাল হিসেবে দেখানোর জন্য এবং অন্য ধর্মের সাথে সংঘাত ও বৈশাখের সাথে দ্বন্দ্ব হিসেবে এবং নিছক একটি বর্ষভিত্তিক করে দ্বীন ও মিল্লাতের ক্ষতি করার জন্য প্রদর্শনী করে, অথচ ঈমানের মৌলিক বিষয় ঈদে আজম উদযাপনে কার্পণ্য করে (নাউজুবিল্লাহ)। ঈমান ধ্বংসাত্মক মওদুদিবাদের অনুসরণে ও অন্যান্য বস্তুবাদি মূর্খতার অবান্তর গড্ডালিকা প্রবাহের অংশ না হয়ে ঈমানী দৃষ্টি ও ঈমানী বিবেক উপলব্ধি নিয়ে চলা উচিত আমাদের সুন্নী ভাইবোনদের সবার।

মহররম প্রথমতঃ ঈমানী শোকের মাস, মহান কারবালার শাহাদাতের অন্তহীন ব্যথা ও শাহাদাতের লক্ষ্য বাস্তবায়নে জীবনপণ ঈমানী শপথের মাস। এদিকে প্রাণপ্রিয় পবিত্র কেবলাভূমি বাতিলের জবরদখলে রুদ্ধ, দুনিয়ায় বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক গণহত্যা, অসহায় নিপীড়িত মা বোন শিশুদের আর্তনাদ, সমগ্র মিল্লাত বাতিল ফেরকা ও বস্তুবাদি মতবাদ এবং ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদের হিংস্র অপরাজনীতি ও তাদের স্বৈরদস্যুতন্ত্রের গ্রাসে বিপন্ন, দ্বীন-মিল্লাত-মানবতা তথা সুন্নীয়তের বিরুদ্ধে সর্ব বাতিলের সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছে এবং সে যুদ্ধে ঈমানিয়াত ও ইনসানিয়াতের ধারা পরাজিত, মিল্লাত ও মানবতা রক্তের সাগরে ডুবন্ত, এদিকে ইসলাম বা সুন্নীয়তের নামে বাতিল জালিম অপশক্তির সর্বনাশা দালালি অসৎ স্বার্থে বিশ্বাসঘাতকতা, এ অবস্থায় চন্দ্র নববর্ষের শুভেচ্ছা বা উদ্যাপনের কোনো অবস্থা বা অবকাশ নেই।

ঈমানদার মাত্রই মহররমে কারবালায় ঈমানের মহাকেন্দ্র সত্যের প্রাণপ্রদীপ প্রাণপ্রিয় খলিফাতুর রাসুল ইমামে আকবার সাইয়্যেদিনা হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও মহামহিম পবিত্র আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেরকে কাফের এজিদ বাহিনীর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে অতুলনীয় ব্যাথা ভরাক্রান্ত। শাহাদাতে কারবালার ঈমানী হৃদয়ের অন্তহীন ব্যথা যন্ত্রনা ঈমানী অনুভ‚তি যাদের নেই তারাই কেবল মহররমের সূচনায় আনন্দ উৎসব পালন করতে পারে।

কোনো ঈমানদার ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মহররমকে এজিদবাদি কাফেরদের মত উৎসব হিসেবে পালন করতে পারে না। শাহাদাতে কারবালার শোক সমগ্র মুসলিম মিল্লাত ও সমগ্র মানবতার শোক, এটা ইসলামের বিকৃতিকারী বাতিল শিয়াদের বিষয় নয়। বাতিল শিয়াবাদ শাহাদাতে কারবালার শোকের বিকৃত প্রদর্শনীর আড়ালে সত্য ও মানবতার প্রতিষ্ঠা এবং মিথ্যা ও জুলুম উৎখাতের লক্ষ্যে মহাত্যাগের এ শাহাদাতের আসল শিক্ষা ও লক্ষ্যের বিপরীতে ইসলামের ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছে।

মহররম মাস আসলে মহান শাহাদাতে কারবালার ঈমানী শোক আর লক্ষ্য বাস্তবায়নে পবিত্র কলেমার বিপ্লবী শপথের ধারায় যেমন মুমিনদের পরিচয় প্রকাশ পায়, তেমনি অবাঞ্চিত শুভেচ্ছা ও নির্মম উৎসবের মাধ্যমে মোনাফেকদের পরিচয় প্রকাশ পায়। ঈমানী শোক ও শপথ এবং বিপরীতে শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা আড়াল করে আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে মাহে মহররমে মুমিন আর মোনাফেকের পরিচয় প্রকাশ পায়।

চন্দ্রবর্ষ সৌরবর্ষ ঋতুবর্ষ সবই প্রাকৃতিক সবই সমগ্র মানবতার কল্যাণে দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দান। দিন রাত মাস বছর চন্দ্র সূর্য এগুলো কোন এক ধর্ম বা কোনো এক জাতি বা গোষ্ঠীর নয় সর্বজনীন, প্রাকৃতিক এসব বিষয়কে বিশেষ ধর্মীয়করণ বা বিধর্মীয়করণ একেবারেই অবান্তর মূর্খতা সংকীর্ণতা এবং ধর্ম বিরোধী ও মানবতাবিরোধী ক্ষতিকর সাম্প্রদায়িক ব্যাধি।

ইসলাম চন্দ্র বা সৌর মাস বর্ষ ভিত্তিক নয় সত্য ভিত্তিক তথা তাওহীদ রেসালাতের ভিত্তিতে এবং ঈমানিয়াত ও ইনসানিয়াত ভিত্তিক। ঐতিহাসিক হিজরত মোবারকের বছর থেকে চন্দ্রবর্ষের বর্তমান সন বা বর্ষ হিজরী সন হিসেবে গণণা হলেও হিজরত মোবারক মহররম মাসে হয় নি এবং আলাদাভাবে হিজরী বর্ষ পালনের শরিয়তগত কোন ভিত্তি নেই বরং এসব বর্ষ হিসেবে উৎসব উদযাপন শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা তথা দ্বীন ও হিজরত মোবারকের আসল শিক্ষা আড়াল করার চক্রান্তে পর্যবসিত হয়। হিজরত মোবারকের পূর্বেও মহররম সফর রবিউল আউয়াল ১২ মাস ছিলো। শানে রেসালাত ও ঈমান হিজরত ভিত্তিক বা হিজরী সন ভিত্তিক নয় বরং শাহাদাতে কারবালাই তাওহীদ রেসালাতের আলো ও দ্বীন খেলাফতের ধারক।

মহান শাহাদাতে কারবালার আমানত পবিত্র কলেমার তাওহীদ রেসালাত ভিত্তিক জীবন চেতনায় বস্তুবাদি চেতনার আঁধারমুক্ত আত্মা ও একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতন্ত্র মুলুকিয়তের রূদ্ধতা জুলুমমুক্ত জীবন- সমাজ-দেশ ও দুনিয়ার লক্ষ্যে- শাহাদাতে কারবালার দাওয়াত- সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্র ও মানবিক সাম্যের ভিত্তিতে মুক্ত মানবতার অখন্ড বিশ্বব্যবস্থা খেলাফতে ইনসানিয়াত (authority of life & state & world of universal humanity) গড়ে তোলার প্রাণপণ ঈমানী শপথে মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস ও মানবতার মুক্তির শাহাদাতের শিক্ষায় পালন করতে হবে মাহে মহররম।

===============================

তফসিরুল কোরআন মাশাহেদুল ঈমানের প্রণেতা ও পবিত্র বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাফহিমুল বোখারী শরীফের প্রণেতা, শায়খুল হাদিস, ইমামে আহলে সুন্নাত, পীরে হাক্কানী, ওলীয়ে রাব্বানী

– আল্লামা সৈয়দ সাইফুর রহমান নিজামী শাহ

(প্রধান উপদেষ্টা-বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব)

– আল্লামা ইমাম হায়াত

(বস্তুর উর্ধ্বে মানবসত্তার প্রবক্তা এবং বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক)

মন্তব্য করুন